বলশেভিকবাদের সেরা দুশমন ট্রটস্কি (তৃতীয় পর্ব) - বোধায়ন রায়
(এই প্রবন্ধটি “Towards A New Dawn…the other voice of the people magazine”-এ ২০১২ সালের জানুয়ারি – ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটিকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন চারুদত্ত নীহারিকা রজত)
(তৃতীয় পর্ব)
বলশেভিকরা একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং শাসক
শ্রেণি ও তাদের দোসররা, মেনশেভিক এবং “সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীরা”, সেটা অনুমান করেছিলো।
তারা বলশেভিকদের, বিশেষত লেনিনকে জার্মানির চর বলে অভিযুক্ত করলেন। যদি লেনিন, প্রতিবিপ্লবী
কোর্টে নিজেকে, সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্ত করবার জন্য হাজির করতেন, তাহলে হয় তাকে ফাঁসিতে
ঝোলানো হতো, নয়তো তাকে গুম-খুন করে ফেলা হতো। ট্রটস্কি, অন্যান্য আরও কয়েকজনের সাথে
মনে করেছিলেন, লেনিনের, বিচারের জন্য, কোর্টের সামনে হাজির হওয়া উচিত। জুলাই- আগস্ট
মাসে অনুষ্ঠিত বলশেভিকদের ষষ্ঠ সম্মেলন এই বিষয়ে মত প্রকাশ করে যে, লেনিনের বিচার আসলে
তাকে খুন করবার একটি পরিকল্পনা এবং তার বিচারের জন্য হাজির হবার মতকে বাতিল করে। এই
সম্মেলনের মধ্য দিয়েই ট্রটস্কি বলশেভিক পার্টিতে প্রবেশ করেন। ট্রটস্কিপন্থীরা জোরের
সাথে দাবি করেন যে, যদিও লেনিন এবং ট্রটস্কির মধ্যে অতীতে অনেক মত পার্থক্য ছিল, বিপ্লবের
মাসগুলিতে তারা একপ্রকার সমঝোতায় আসেন এই মর্মে যে, লেনিন ট্রটস্কির সমাজতান্ত্রিক
বিপ্লবের তত্ত্বকে গ্রহণ করছেন এবং ট্রটস্কি লেনিনের পার্টি গঠন এবং সংগঠন সম্পর্কিত
তত্ত্বকে গ্রহণ করছেন। বাস্তবে, ষষ্ঠ সম্মেলনে, ট্রটস্কির রাজনৈতিক গ্রুপ, যার নাম
ছিল মেঝ্রাইয়নৎসি, বলশেভিক রাজনীতিকে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রহণ করে এবং বলশেভিক পার্টির
সাথে মিশে যায়; এর বদলে আর কিছুই সেখানে ঘটে নি। লেনিনের কোনও কাজে, কোথাও ট্রটস্কির
ঘৃণ্য চিরস্থায়ী বিপ্লবের তত্ত্বের কোনও প্রকার গ্রহণের চিহ্ন, পাওয়া যায় না।
বুর্জোয়া এবং ভুস্বামীরা বলশেভিকদের গুঁড়িয়ে দেবার জন্য প্রচণ্ড চেষ্টা
করছিলো। জেনারেল কোরনিলভের পেত্রোগ্রাদ দখল করবার এইরকম একটি প্রচেষ্টা, বলশেভিকদের
নেতৃত্বে, হাজার হাজার সেনা এবং শ্রমিকরা সফল ভাবে প্রতিহত করেন। অক্টোবরের গোড়ায়,
লেনিন গোপনে পেত্রোগ্রাদে ফিরলেন। বলশেভিকরা সেনাবাহিনীতে তাদের প্রভাব বিস্তার করলেন
এবং গণ-অভ্যুত্থানের একটি রূপরেখা প্রস্তুত করলেন। ওদিকে, কামেনেভ ও জিনোভিয়েভ এই গণ-অভ্যুত্থানের
পরিকল্পনার সাথে দ্বিমত পোষণ করলেন এবং এই খবরটি তারা মেনশিভিক সংবাদপত্রকে পাচার করে
দিলেন। ফলস্বরূপ, অস্থায়ী সরকার শহরে একটি বিরাট সেনাবাহিনী মজুত করলেন। ট্রটস্কি প্রস্তাব
করলেন যে, সোভিয়েতগুলির দ্বিতীয় সম্মেলনের আগে গণ-অভ্যুত্থান শুরু করা উচিত হবে না।
বলশেভিকরা যদি সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন, তাহলে অস্থায়ী সরকার নিজেদেরকে সামরিক প্রত্যাঘাতের জন্য প্রস্তুত
হবার আরও বেশি সময় পেয়ে যেত। পরবর্তীতে, ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তিনি গণ-অভ্যুত্থানের
তারিখটি সবাইকে জানিয়ে দেন। ফলে অভ্যুত্থানকে বাতিল করতে হয়। ট্রটস্কির লেখাপত্র এবং
তার অনুগামীরা সাধারণত তাকে এই ভাবে চিত্রিত করে, যেন তিনিই ছিলেন গণ-অভ্যুত্থানের
শঙ্খনাদ, কিন্তু ট্রটস্কি এমনকি মূল যে কেন্দ্র, যার দায়িত্ব ছিল গণ-অভ্যুত্থানের সাংগঠনিক
নেতৃত্ব দেওয়া, তাতে নির্বাচিত পর্যন্ত হন নি। ২৯শে অক্টোবর, স্বরদলভ, স্তালিন, ডারজারিনস্কি, বুবুনভ এবং উরিটস্কি – এই পাঁচ জন
ছিলেন বলশেভিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য যারা, বিপ্লবের মূল কেন্দ্রের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অস্থায়ী সরকার ২৪শে অক্টোবর
(৬-ই নভেম্বর) আক্রমণ করে। সেই আক্রমণকে সফল ভাবে প্রতিহত করা হয় এবং সেই রাতেই, লেনিন
বলশেভিক হেডকোয়ার্টারে এসে পৌঁছান ও গণঅভ্যুত্থানের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। পরের
দিন পেত্রোগ্রাদের অস্থায়ী সরকারের ঘাঁটিগুলিকে বলশেভিক বাহিনী দখল করে নেয়। পেত্রোগ্রাদের
ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে, সারা রাশিয়া জুড়ে বিপ্লবের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক ক্ষমতা দখলের ঠিক পরেই, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে সুরক্ষিত করবার
জন্য, বলশেভিকদের প্রথম কাজ ছিল, ৎজারপন্থীরা এবং পুঁজিবাদী সরকারগুলি, রাশিয়াকে যে
সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল, তার থেকে রাশিয়াকে বের করে আনা। এর জন্য
তাদের প্রয়োজন ছিল জার্মানির সাথে সন্ধি। ট্রটস্কিকে ব্রেস্ট-লিটভস্ক এর রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের
প্রধান করা হয়। কিন্তু তিনি, আরও কিছু “বাম-কমিউনিস্ট” এবং অন্যান্যদের সাথে দাবি তোলেন
যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি ঘোষণা করে দেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন
এই সন্ধি-চুক্তিতে সই করতে রাজি নয়। এতে জার্মান সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দর বাড়িয়ে নিতে
সক্ষম হয় এবং আরও বেশি অসম্মানজনক শর্ত পরবর্তীতে চাপিয়ে দেয়। প্রাথমিক ভাবে ট্রটস্কির
মত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাধিক্যের দ্বারা গৃহীত হয়। কিন্তু লেনিন লাগাতার এর বিরুদ্ধে
সংগ্রাম পরিচালনা করেন এবং বিজয়ী হন। এই সমগ্র সংগ্রামের পর্যায়ে, তাকে সর্বান্তকরণে
সমর্থন করে গেছেন স্তালিন, স্বরদলভ এবং অন্যান্যরা।
উপরে আমরা যেরকম দেখলাম, ট্রটস্কি, তার প্রায়োগিক জ্ঞানের অভাবের জন্য,
একজন দক্ষ বিশেষজ্ঞ হতে পারেন নি, বিশেষত সামরিক প্রশ্নে। প্রকৃতপক্ষে, কিছু ক্ষেত্রে,
ট্রটস্কির প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে, লাল ফৌজকে হয়তো পরাজয় স্বীকার করতে হতো। ১৯১৯ সালের
গ্রীষ্মকালে, কোলচাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় ট্রটস্কি প্রস্তাব করেন, কোলচাককে, কারখানা
এবং রেলপথ আছে এমন অঞ্চল পর্যন্ত তাড়িয়ে দেওয়া
হোক এবং তারপর লালফৌজকে একটি অন্য ফ্রন্টে নিযুক্ত করা হোক। কিন্তু এতে কোলচাক যুদ্ধের
রসদ পেয়ে যাবে এবং আবার আক্রমণের জন্য নিজের সৈন্যবাহিনীকে পুনর্গঠিত করতে পারবে, এটা
বুঝতে পেরে কেন্দ্রীয় কমিটি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করে এবং কোলচাককে, শিল্প অঞ্চলের বাইরে পর্যন্ত
তাড়া করে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। ট্রটস্কি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তার পদত্যাগপত্র
জমা দেন কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি তা গ্রহণ করতে
অস্বীকার করে। ১৯১৯ সালের শরৎকালে, দেনিকিনের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ যখন ক্রমশ দুর্বল হচ্ছিল, কেন্দ্রীয় কমিটি ট্রটস্কিকে ফ্রন্ট থেকে ফিরিয়ে
নেবার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সামরিক নেতৃত্ব, দক্ষিণ ফ্রন্টের বিষয়ে ট্রটস্কির “কোনও
প্রকার খবরদারি” না করার দাবি জানান এবং লড়াই ট্রটস্কিকে বাদ দিয়েই চলতে থাকে।
১৯১৯ সালে ট্রটস্কি, সোভিয়েত ইউনিয়নের “সামরিক এবং নৌবাহিনী সংক্রান্ত
পিপলস কমিশার” নিযুক্ত হন। অন্যান্য পরিষেবা প্রদানের মধ্যে তিনি, ফ্রন্টের বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে, একটি বিশেষ ট্রেনে চেপে পৌঁছে যান এবং অক্টোবর বিপ্লবের আদর্শে
সেনাদের শিক্ষিত করেন। এছাড়াও তিনি, ফ্রন্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে যুদ্ধের
জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সরবরাহ নিশ্চিত করেন, বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের একটি সুশৃঙ্খল
সেনাবাহিনীতে সংগঠিত করেন, অভিজ্ঞ সেনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিযুক্ত করেন প্রভৃতি। গৃহযুদ্ধে
নিজের ভূমিকা বর্ণনা করতে গিয়ে ট্রটস্কি লেখেন, “প্রতিহিংসা ছাড়া একটি সেনাবাহিনী গঠন
করা যায় না। জনতার একটা ভিড়কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া যায় না, যদিনা সেনা সদরের নিজের
অস্ত্রভাণ্ডারে মৃত্যুদণ্ড থাকে …… সেনাধ্যক্ষ সর্বদাই সেনাদের, ফ্রন্টের সম্ভাব্য
মৃত্যু এবং পিছনের নিশ্চিত মৃত্যুর মাঝে রাখবে।“ প্রকৃতপক্ষে, ট্রটস্কির এই অপ্রয়োজনীয়
কঠোরতা এবং চরম শাস্তির প্রতি মোহ, তাকে কিছু সেনা ছাউনিতে অপ্রিয় করে তুলেছিল। বলশেভিক
পার্টির অষ্টম সম্মেলনে স্তালিন লিখেছিলেন, “এই সামরিক বিরোধিতা গঠিত হয়েছে একটি ভালো
সংখ্যক, বর্তমানে ছোট ছোট গ্রুপে ছত্রখান হয়ে যাওয়া “বাম কমিউনিস্ট”-দের নিয়ে; কিন্তু
এর মধ্যে এছাড়াও রয়েছেন কিছু পার্টি কর্মী যারা কোনদিন, কোন বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটেন
নি, কিন্তু তারা আজ, ট্রটস্কি যেভাবে সেনাদের বিষয়টিকে পরিচালনা করছেন, তাতে হতাশ।
সেনার অধিকাংশ প্রতিনিধিই ট্রটস্কির প্রতি স্পষ্টতই শত্রুভাবাপন্ন; তারা, ট্রটস্কির,
পুরাতন ৎজার-বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধায় ক্ষুব্ধ। এই পুরাতন ৎজার-বাহিনীর কেউ কেউ গৃহযুদ্ধে
আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যাচ্ছেন, এবং ট্রটস্কির, পুরানো বলশেভিক ক্যাডারদের
প্রতি, উদ্ধত ও শত্রুতামূলক আচরণও তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। এগুলি সবই “ট্রটস্কির অনুশীলনের নমুনা“ যেগুলি সম্মেলনে উদাহরণ হিসাবে পেশ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ,
ট্রটস্কি, ফ্রন্টে কর্মরত একাধিক বিশিষ্ট সেনা কমিউনিস্টকে গুলি করে খুন করতে চেয়েছিলেন
শুধু এই কারণে যে, তারা তাদের অসন্তুষ্টির জন্য তাকে দায়ি করেছিল। এটা সরাসরি শত্রুদের
হাতের পুতুলের মতন আচরণ। যথাসময়ে কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে এবং সামরিক বাহিনীর প্রতিবাদের
কারণে, এই কমরেডদের জীবন রক্ষা পায়।“
গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধিতাঃ
যদিও ট্রটস্কিপন্থীরা, সোভিয়েত ইউনিয়নে আমলাতান্ত্রিক এবং একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পত্তনের জন্য স্তালিনকে দায়ি
করে থাকে, বাস্তবে এই ঝোঁকগুলি একমাত্র ট্রটস্কির মধ্যেই প্রবল ভাবে ক্রিয়াশীল ছিল
এবং লেনিনের সাথে তার ট্রেড ইউনিন বিতর্কের সময়ে এটা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। ১৯২০ সালে,
সারা রাশিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসে ট্রটস্কি প্রস্তাব করেছিলেন, “আমরা সোভিয়েত রাষ্ট্রের
অর্থনৈতিক অর্গানগুলিকে বারবার গড়েছি, তাদের ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছি এবং বিভিন্ন শ্রমিকদের
এবং তাদের পদগুলিকে সযত্নে বেছে এবং পরীক্ষা করে তাকে পুনরায় গড়েছি। এটা খুবই স্পষ্ট
যে, এখন ইউনিয়নগুলির পুনর্গঠন জরুরী, অর্থাৎ প্রথমে ইউনিয়নের নির্দেশক কর্মচারীবৃন্দকে
বাছা।“ লেনিন এর বিরোধিতা করলেন এবং ট্রেড ইউনিয়ন পলিসির ক্ষেত্রে একটি পাল্টা খসড়া
প্রস্তাব করলেন। সম্মতির ভিত্তিতে লেনিনের খসড়াটি গৃহীত হয় যেখানে বলা হয়েছে, “একটি
সবচেয়ে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর এবং সুব্যবস্থিত সংগ্রাম চালানো জরুরী যাতে করে, কেন্দ্রীকরণের
ক্ষয় কে রোখা যায় এবং ট্রেড ইউনিয়নের কাজে দখল দেওয়া আমলাতন্ত্রের ভিতর সামরিক কায়দায়
কাজের ধারা, আত্ম-প্রবঞ্চনা এবং তুচ্ছ আমলাবর্গকে এবং ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে দখলদারিকে
দূর করা যায়। শ্রমের স্বাস্থ্যকর সামরিকীকরণকে সফলতার সাথে পুরস্কৃত করা হবে একমাত্র
যদি পার্টি, সোভিয়েতগুলি এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলি এই প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তাকে ব্যখ্যা
করতে পারে, যদি সেটা দেশকে রক্ষা করবার প্রশ্নে হয় বা যদি সেটা অধিকাংশ শ্রমিকের স্বার্থে
হয়।“
পরবর্তীতে লেনিন তীব্র ভাবে ট্রটস্কির ট্রেড ইউনিয়নের উপর থিসিসের সমালোচনা
করে দাবি করেন, “এই সমস্ত থিসিসের ভিত্তি হচ্ছে একটি সাধারণ নীতি, একটি প্রস্তাব যা
নিজেই মূলগতভাবে ভ্রান্ত।“ তিনি ট্রটস্কির নীতিকে বর্ণনা করলেন “আতলামি, বিমূর্ত,
“অন্তরসারশূন্য” এবং তাত্ত্বিক ভাবে একটি ভ্রান্ত সাধারণ তত্ত্ব যা, যাকিছু বাস্তব এবং দক্ষতামূলক তাকেই অবহেলা করেছে।“
খনি শ্রমিকদের দ্বিতীয় সারা রাশিয়া সম্মেলনে লেনিন, ট্রটস্কি সম্পর্কে আবারও মন্তব্য করেন এবং টমস্কি ও ট্রটস্কিকে গোষ্ঠীবাজির
অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। “কিন্তু এটা শয়তানি। একমাত্র যার মাথায় ছিট আছে সে এরকম কথা
বলতে পারে” এবং “একটা গোষ্ঠীবাজি শুরু করা এবং জনগণের মধ্যে, সেক্ট্রানাইটদের বিরুদ্ধে
শত্রুতার চাষ করার জন্য টমস্কিকে অভিযুক্ত করা আদপে গোটা ঘটনাকে বিকৃত করা, সমস্ত কাজকে
পণ্ড করা এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির সাথে সম্পর্ককে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু ট্রেড
ইউনিয়নগুলি সমস্ত প্রোলেতারিয়েতকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে রেখেছে। যদি এই জিনিস চলতে থাকে
এবং মঞ্চে তার পক্ষে ভোট পড়ে, তাহলে তা সোভিয়েত ইউনিয়নকে পতনের দিকে নিয়ে যাবে।“ লেনিন, তার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ট্রটস্কির
গোষ্ঠীবাজির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ছিল এবং এই বিপদের পরিণাম বুঝতে পেরেছিলেন।
ট্রেড ইউনিয়ন বিতর্কের সমাপ্তির পর, লেনিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি
সমস্ত রকমের গোষ্ঠীবাজিকে নিষিদ্ধ করে। গোষ্ঠীবাজিতে জড়িত পার্টির যে কাউকে, বিনা শর্তে
পার্টি থেকে বহিষ্কার করবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ট্রটস্কি, লেনিনের অসুস্থতার
সুযোগ গ্রহণ করেন এবং বলশেভিক নেতৃত্বের উপর
আরেকটি আক্রমণ শানালেন। ট্রটস্কি, “The New Course” নাম দিয়ে একটি প্যামফ্লেট প্রকাশ
করে যেখানে তিনি দাবি করেন যে, “…… পার্টি যেন বেঁচে আছে একটি দোতলা মকানে; উপরের তলা
হল সেই জায়গা, যেখানে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং নীচের তলা হল সেই জায়গা, যেখানে আপনি সিদ্ধান্তগুলি জানতে পারেন।“
এবং পরোক্ষ ভাবে লেনিনবাদী পোড়খাওয়া বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে “দলবাজি, আমলাতান্ত্রিক আত্মসন্তুষ্টি
এবং পার্টির সামগ্রিক মেজাজ, চিন্তাধারা এবং প্রয়োজনের প্রতি ঘৃণার”, এমনকি “সুবিধাবাদী
অধঃপতন”-এর অভিযোগ আনলেন। ট্রটস্কিপন্থীরা
এই নথি সমস্ত লেনিনবাদ বিরোধী আন্তঃপার্টি সুবিধাবাদীদের মধ্যে বিতরণ করলেন এবং পার্টির
উপর একটি সাধারণ আলোচনা জারি করলেন, কিন্তু সর্বত্র সেগুলিকে সম্পূর্ণভাবে নাস্তানাবুদ
করা হল; শুধু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং দপ্তরের ভোট তারা পেলেন।
ট্রটস্কি প্রায়শই বলতেন যে, লেনিন, পার্টির নেতৃত্ব হিসাবে, স্তালিনের
বদলে ট্রটস্কিকে পচ্ছন্দ করতেন। এর জন্য তারা, জাতীয়তার প্রশ্নে, লেনিনের সাথে স্তালিনের
মতপার্থক্যকে বিশেষভাবে দেখাতেন। এটা সত্য যে, জাতীয়তার প্রশ্নে লেনিন, স্তালিনের তীব্র
সমালোচনা করেছেন এবং তাকে একজন “জাতীয় সমাজতন্ত্রী” বলেছেন। লেনিন, স্তালিনকে তার পদ
থেকে সরিয়ে দেবার প্রস্তাবও করেছিলেন। “সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কমরেড স্তালিনের হাতে
অনিয়ন্ত্রিত কর্তৃত্ব জমা হয়েছে, এবং আমি নিশ্চিত নই যে, এই কর্তৃত্বকে তিনি সর্বদা
সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন কিনা। অপরদিকে কমরেড ট্রটস্কি, কেন্দ্রীয় কমিটির
বিরুদ্ধে People’s Comissariat of Communications-এর প্রশ্নে ইতিমধ্যে তার অসাধারণ
সক্ষমতার দ্বারা নিজেকে বিশেষ ভাবে প্রমাণ করেছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে,
তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি, কিন্তু তিনি প্রদর্শন করেছেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস
এবং নিখাদ প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে, তিনি অতিরিক্ত পূর্ব হতে গড়ে ওঠা ধারণার বশবর্তী
…… স্তালিন অত্যন্ত অশিষ্ট এবং এই ত্রুটি আমাদের মধ্যে, কমিউনিস্টদের মধ্যে যদিওবা
সহ্য করা যায়, কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সেটি অসহ্য। এই কারণে আমি প্রস্তাব করছি
যে, কমরেডগণ স্তালিনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেবার উপায় নিয়ে ভাবুক এবং আরেকজনকে তার বদলে
নিয়োগ করুক যিনি, বাকি সমস্ত বিষয়ে স্তালিনের থেকে আলাদা হবে এবং শুধু একটিই উপযোগিতা
তার থাকবে, যথা আরও সহনশীল, আরও অনুগত, আরও নম্র এবং কমরেডদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল,
কম খামখেয়ালী প্রভৃতি।“ যদিও, কেন্দ্রীয় কমিটি সক্ষমতর কোন লোক খুঁজে পায় নি এবং স্তালিনকেই
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আবারও নির্বাচিত করে। “আমলাতন্ত্র বিরোধী”
ট্রটস্কিপন্থীদের এটা জানা উচিত যে, এমনকি যদি লেনিনও নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করে থাকেন
যে, স্তালিনকে ট্রটস্কির দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হোক, কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণ অধিকার
আছে তাকে অমান্য করবার। একটি কমিউনিস্ট পার্টিতে ব্যক্তি, সংগঠনের অধীনে থাকেন।
১৯২৪ সালের ২১শে জানুয়ারি, লেনিন মারা যান। তার মৃত্যুর পরেই, ট্রটস্কি
এবং তার সমর্থকরা, ট্রটস্কিকে অক্টোবর বিপ্লবের মুখ্য নেতা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা শুরু
করেন। ট্রটস্কি, এই উদ্দেশ্যেই, একটি বই লিখলেন যার শিরোনাম, “The Lessons of
October”। তার বইতে তিনি, কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যেকার মতপার্থক্যকে অতিরঞ্জিত করে দেখালেন
এবং ইঙ্গিত করলেন যে, লেনিন এবং বাকি কেন্দ্রীয় কমিটি সময়ে সময়ে দোদুল্যমানতায় ভুগেছেন
এবং একমাত্র ট্রটস্কি-ই, একা, সঠিক লাইনে দৃঢ় থেকেছেন প্রভৃতি। বইটি কমিউনিস্ট পার্টির
দ্বারা তীব্র ভাবে সমালোচিত হয়। স্তালিন বললেন, “এর থেকে আমাদের কি শিক্ষা নেওয়া উচিত?
শুধু একটিই শিক্ষা, যে লেনিনবাদী এবং ট্রটস্কিপন্থীদের মধ্যে একটি দীর্ঘ সহযোগিতা একমাত্র
সম্ভব যদি, ট্রটস্কিপন্থীরা তাদের গোডাউনের বাসি পচা মালগুলোকে বাতিল করে এবং যদি,
তারা সম্পূর্ণভাবে লেনিনবাদক গ্রহণ করেন। ট্রটস্কি অক্টোবরের শিক্ষা সম্পর্কে লিখেছিলেন
কিন্তু, তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে, সমস্ত শিক্ষার সাথে, অক্টোবরের আরেকটি শিক্ষা আছে,
যেটির উল্লেখ আমি একটু আগেই করেছি এবং যেটি ট্রটস্কিবাদের জন্য প্রধান গুরুত্ব সম্পন্ন।
অক্টোবর থেকে ট্রটস্কিবাদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত।“ নাদেজদা ক্রুপস্কায়া, লেনিনের সারা
জীবনের সাথী, বইটির সার্বিক ভুল প্রস্তাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেনঃ “প্রশ্ন হলো, কমরেড
ট্রটস্কি আমাদের আহবান জানান “অক্টোবরের শিক্ষাকে” অধ্যয়ন করতে, কিন্তু তিনি, সেই অধ্যায়নের
জন্য সঠিক গতিপথ প্রস্তুত করেন নি। তিনি প্রস্তাব করেন যে, আমরা অধ্যয়ন করবো অক্টোবরে
ঐ লোকটি বা সেই লোকটি, কেন্দ্রীয় কমিটির ঐ ঝোঁক বা সেই ঝোঁক কি ভূমিকা রেখেছিল প্রভৃতি।
কিন্তু এটি হল তা, যা আমরা অবশ্যই অধ্যয়ন করবো না।“ তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মার্কসীয়
বিশ্লেষণের উপর দখল, কোনোকালেই ট্রটস্কির শক্ত-পোক্ত ছিল না।“ তিনি এও বলেন, “ট্রটস্কি
পার্টি সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন, কিন্তু তার কাছে পার্টি হলো নেতাদের, দণ্ডমুণ্ডের
কর্তাদের কর্মচারী। কিন্তু যারা প্রকৃত ভাবে অক্টোবরকে অধ্যয়ন করতে চান, তারা অবশ্যই
অক্টোবরে পার্টি যা ছিল, তাকে সেই রূপেই অধ্যয়ন করবে। পার্টি ছিল একটি জীবন্ত শরীর
যাতে, কেন্দ্রীয় কমিটি (“কর্মচারীবৃন্দ) পার্টি হতে আলাদা ছিল না, যাতে নিম্নতম স্তরের
পার্টি সংগঠন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে দৈনন্দিন যোগাযোগের মধ্যে ছিল। কমরেড স্বেরদলভ
এবং স্তালিন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানতেন পেত্রোগ্রাদের প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি প্রদেশে
এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে কি ঘটছ। এবং লেনিনও এটি জানতেন, যদিও, তখন তিনি লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন……
এবং ঐতিহাসিক ভাবে পরীক্ষিত লেনিনবাদের পথ থেকে এখন চ্যুত হওয়া হবে বিপদজনক এবং ধ্বংসাত্মক।
এবং যখন অ-সচেতন ভাবে হলেও, ট্রটস্কির মতন কমরেড সেই পথে হাঁটেন, যে পথ লেনিনবাদের
সংশোধনের পথ, তখন পার্টির অবশ্যই উচিত সোচ্চার হওয়া।“
উপরে উল্লেখিত প্রবীণ কমিউনিস্টদের দ্বারা, ট্রটস্কিবাদ যে লেনিনবাদের
সংশোধন, এটা বুঝতে পারার পরেও, ট্রটস্কিবাদী এবং লেনিনবাদী চিন্তাধারার মধ্যেকার বিতর্ক
পার্টির ভিতরে চলতে থাকে। বলশেভিক কেন্দ্রীয় কমিটিতে ট্রটস্কির বিরোধী গোষ্ঠী ১৯২৬
সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছিল জিনোভিয়েভপন্থীরা। আগের বছরই জিনোভিয়েভপন্থীরা
এমন একটি প্রোগ্রামের প্রস্তাব করেছিলেন যা, সোভিয়েত ইউনিয়নকে, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়
যন্ত্রপাতির জন্য, পুঁজিবাদী দেশগুলির উপর নির্ভরশীল করে দিতো। ১৪তম পার্টি সম্মেলনে
তাদের পরাজিত করা হয় এবং তারা যখন কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সংগঠিত
করতে চেষ্টা করে, তখন তাদের সেখানেও পরাজিত করা হয়। কিন্তু এরপর তারা হাত ধরে ট্রটস্কিপন্থীদের
এবং একটি পার্টি বিরোধী ব্লক গঠন করে। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে তাদের বারেবারে সতর্ক
করা হয় কিন্তু, তারা, পূর্বেই পার্টির দ্বারা নিষিদ্ধ, কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে।
শরৎকালে, তারা আগামী পঞ্চদশ পার্টি সম্মেলনের উপর একটি আলোচনা চেয়ে, কারখানায় পার্টি
মিটিংগুলিতে বাধাদান করতে থাকে। পার্টি এগুলিকে সফলভাবে পরাস্ত করে এবং তখন তারা, কেন্দ্রীয়
কমিটির কাছে, ট্রটস্কি, কামেনেভ, জিনোভিয়েভ এবং সোকোলনিকভের সইকরা মুচলেকা জমা দেয়
এবং নিজেদের গোষ্ঠীবাজিকে ত্যাগ করবে বলে ও ভবিষ্যতে পার্টির প্রতি আনুগত্যের শপথ নেয়।
অবশ্য, ১৯২৭ সালে, তারা আবার তাদের কাজকর্ম শুরু করে। তারা একটি প্রোগ্রামের প্রস্তাব
নিয়ে আসে, যা মাঝারি ও ছোট কৃষকদের বিরুদ্ধে, কুলাকদের শক্তিশালী করবে। অক্টোবর মাসে,
কেন্দ্রীয় কমিটি একটি প্রকাশ্য সাধারণ সভায়, এর উপর আলোচনার ডাক দেয় এবং সেখানে, ট্রটস্কিপন্থীরা
৭ লাখ ২৪ হাজার বনাম ৪ হাজার ভোটে পরাজিত হয়।
কিন্তু পার্টির সামগ্রিক মতের সামনে আত্মসমর্পণ করার বদলে, যখন সোভিয়েত জনগণ অক্টোবর
বিপ্লবের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মিছিল বের করছিল, তখন মস্কো এবং লেনিনগ্রাদে তারা পাল্টা
মিছিল বের করে; তাদের সঙ্গে ছিল ট্রটস্কিপন্থীদের সাধারণ মিত্র, কুলাক, নেপমেন এবং
সমস্ত ধরণের প্রতিক্রিয়াশীলরা। কিন্তু লেনিনবাদি পার্টির বিপ্লবী শ্রমিক সমর্থকদের
দ্বারা তাদের অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে, ট্রটস্কি তার ব্লকের পরাজয় সম্পর্কে
লিখেছেন, “প্রশাসনিক যন্ত্রের সামনে চিন্তাধারার লড়াই পরাজয় বরণ করেঃ পার্টির আমলারা
টেলিফোনের মাধ্যমে হুকুম জারি করে স্থানীয়
শ্রমিকদের, মিটিং-এ উপস্থিত থাকতে বাধ্য করে, অনেক গাড়ি মিটিং-এর সামনে জড়ো হয়ে হুটার
বাজাতে থাকে এবং বিরোধীরা মঞ্চে আসামাত্র সিটি বাজিয়ে, হো হো চিৎকার করে তাদের অপদস্ত
করা হয়।“ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্টরা, যারা এক দশক মাত্র আগে একটি সমাজতান্ত্রিক
বিপ্লবে জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সমস্ত প্রধান পুঁজিবাদী শক্তির মিলিত সঙ্ঘকে পরাস্ত
করেছে, তারা “স্তালিনবাদী”-দের সিটি এবং সাইরেন বাজানোতে এতো প্রভাবিত হয়েছিল যে, তাদের
এক শতাংশও ট্রটস্কিপন্থীদের পক্ষে ভোট দিলো না! কেরেনেস্কি যদি বলশেভিকদের এই দুর্বলতা
জানতো, তাহলে শ্বেত-রক্ষীরা, বন্দুক এবং কামানের পরিবর্তে, অক্টোবর বিপ্লবকে পরাজিত
করতে সিটি এবং সাইরেন ব্যবহার করতো নিশ্চিত।
এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের ফলে, কামেনেভ, জিনোভিয়েভ, স্মিরনভ এবং স্বয়ং ট্রটস্কি সহ সমস্ত পার্টি বিরোধী ট্রটস্কিপন্থী ব্লককে, ১৯২৭ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও ১৯২৮ সালের গোড়ায় পার্টি থেকে বিতাড়িত করা হয়। পরবর্তীকালে, অনেকেই প্রকাশ্যে ট্রটস্কিবাদকে পরিত্যাগ করলে এবং পার্টির কর্মসূচী ও শৃঙ্খলার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করলে, তাদের অধিকাংশকেই পার্টিতে পুনর্বহাল করা হয়। ১৯২৮ সালের জানুয়ারি মাসে, ট্রটস্কিকে, প্রথমে কাজাকিস্তানের আল্মা আটাতে এবং পরবর্তীতে, ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তুর্কিতে নির্বাসিত করা হয়।


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন