মাও জমানায় চীন - পর্ব ২



চীনে কোনও মুদ্রাস্ফীতি নেই কেন?

-মূল রচনা পেং কুয়াং শি
-অনুবাদে চারুদত্ত নীহারিকা রজত
[ফরেন ল্যাংগুয়েজ প্রেস, পিকিং; প্রথম প্রকাশ – ১৯৭৬ সাল]





একটি প্রস্তাবনাঃ


সারা পৃথিবী জুড়ে, পুঁজিবাদী অর্থনীতি বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। সাধারণ মানুষ এবং তাদের পরিবারগুলি, নিত্য মুদ্রাস্ফিতির দ্বারা তাড়িত হচ্ছে। এই ভয়াবহ বিপদ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা, পৃথিবীর  অনেক অংশেই একটি ব্যাপক আলোচিত সমস্যা। একেবারে বিপরীত অবস্থা বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে। চীনের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ধারাবাহিক বৃদ্ধিকে ধন্যবাদ, যার ভিত্তি হল স্বাধীনতা, আত্ম-নির্ভরতা এবং গণ-উদ্যোগের পূর্ণ প্রদর্শন, প্রতিষ্ঠা থেকে পঁচিশ  বছর যাবত জনগণের জীবনমান স্থিরভাবে উন্নত হয়েছে। এইক্ষেতে, একটি উল্লেখযোগ্য বিশিষ্টতা হল  রেনমিনবি-র (জনগণের মুদ্রা)(এরপর থেকে একে আমরা RMB বলবো) বা চীনা ইউয়ানের    স্টেবিলিটি।
চীন কিভাবে, মুক্তির (চীনের স্বাধীনতা, ১৯৪৯ সাল- অনুবাদক) সময়ের ঠিক পূর্বের, চলমান মুদ্রাস্ফীতির ফলাফলকে জয় করতে পারলো? কিভাবে, এতোগুলো বছর ধরে, তার মুদ্রা, সারা পুঁজিবাদী দুনিয়াতে বিরাজমান মুদ্রা-সংকট থেকে নিরাপদ থাকলো? কিভাবে RMB-র স্টেবিলিটি, জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে? এই বুকলেটে, উত্তরগুলি দেওয়া আছে যার ভিত্তি হল লেখকের দ্বারা কৃত একটি সমীক্ষা, যেখানে তিনি একাধিক পরিবারের কাছে গেছেন, বাজারের সাথে তা মিলিয়েছেন এবং অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও বানিজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি দপ্তরগুলির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
এই তথ্যগুলিকেই উপস্থাপিত করা হয়েছে এই আশায় যে, এগুলি হয়তো বিদেশী পাঠকদেরকে নয়া চীনের অর্থনীতি এবং মুদ্রা ব্যবস্থা, তার অর্থনৈতিক নীতিসমূহ এবং জনগণের জীবনকে বুঝতে সাহায্য করবে।

জনগণ মুদ্রাস্ফীতির উদ্বেগ থেকে মুক্ত

প্রাত্যহিক জীবনে, টাকা একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এর মাধ্যমেই আমরা খাদ্য সংগ্রহ করি, পোশাকআশাক সংগ্রহ কিনি প্রভৃতি। সুতরাং, টাকার ওঠাপড়া, সকলের উদ্বেগ। যদিও, এই সমীক্ষার সময়ে, আমি যাদের সাথে কথা বলেছি, তারা, RMB-র মূল্যের সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে প্রায় কোনও ধারণাই দিতে পারে নি। এমনকি, অনেক গৃহবধূ, মুদ্রাস্ফীতি কি, তাই জানেন না।
কেন? পিকিং পৌরসভার স্ট্যাটিস্টিকাল ব্যুরোর একটি সারণী আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

পিকিং-এ RMB-র ক্রয় ক্ষমতা
(১৯৬৫ = ১০০)
   
১৯৬৬
১৯৬৮
১৯৭০
১৯৭৩
পণ্যদ্রব্যের জন্য
১০০.২২ 
১০০.৫২
১০১.৩২
১০১.৫৭
পরিষেবার জন্য
১০২.২৩
১০২.৫২
১০২.৫২
১০৩.২০

এই সংখ্যাগুলি আমাদের বলে যে, ১০০ ইউয়ান, তার ১৯৬৫ সালের মুল্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে ১০১.৫৭ ইউয়ান মূল্যের পণ্য কিনতে পারতো; এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে (ভাড়া, জল, বিদ্যুৎ, বাসের ভাড়া প্রভৃতি) তারা ১০৩.২০ মূল্যের সমতুল্য কিনতে পারতো। অতএব, ইউয়ানের মুল্য যে শুধু স্টেবল ছিল তাই নয়, একটি হালকা উপরের দিকের ঝোঁকও দেখা যাচ্ছে।
পিকিং-এর এই দৃশ্য, সারা দেশের প্রতিনিধিত্বকারী স্বরূপ। সারা পুঁজিবাদী দুনিয়ার মুদ্রাস্ফীতির আস্ফালন সত্ত্বেও, চীনের ইউয়ান আজও স্টেবল।

স্টেবল মুল্য-স্তর; জীবন মানের ক্রম উন্নতি
  
মূল্যের স্তর, জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক এটি টাকার ক্রয় ক্ষমতা, জনগণের জীবনযাপনের মানের ক্ষেত্রে, একটি মানদণ্ড হিসাবে কাজ করে। নিচে, চীনের একটি শ্রমিক পরিবারের পারিবারিক বাজেট দেওয়া হল।

চ্যাং পরিবারের পারিবারিক বাজেট

তিনি কি খরচ করেন, সেই ব্যাপারে কথা বলবার সময়, কাপড় কলের মজুর, ৩৬ বছর বয়সী চাং বাও-চিহ আমাকে বলেছিল, “দেখো, খাবারদাবার, জামাকাপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, এতোগুলো বছর ধরে একই থেকেছে”। “আমার পরিবার, খুব উঁচু জীবনযাত্রার মানের নয়, কিন্তু আমাদের আয়, আমাদের প্রয়োজনকে পুষিয়ে দেয় এবং আমদের কেনাকাটার ব্যাপারে কাটছাঁট করতে হয় না”। তার কথাগুলি স্পষ্টতই এটা প্রতিষ্ঠিত করে যে, চীনে, দামের এই স্টেবিলিটি, পালাক্রমে তার জনগণের নিরাপদ জীবনের পক্ষেই অবদান রাখে।
চাং, পিকিং-এর ২ নম্বর রাষ্ট্রীয় কাপড়ের কলের উৎপাদন সংক্রান্ত টিমের লিডার। তার ৩৬ বছর বয়সী স্ত্রী চাং শু-হুয়া, সেখানেই, মাকুতে সুতা জড়ানোর মেশিনে কাজ করে। তাদের দুজনের মোট মাসিক আয় ১৫৪ ইউয়ান। তাদের দুটি সন্তান; একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে, আরেকটি দিবা বিভাগের নার্সারি স্কুলে। চাং পরিবার সকালের জলখাবার এবং রাতের খাবার একসাথে বাড়িতে খায় এবং দুপুরের খাবার তারা, তাদের বাড়ির কাছের, কারখানার ভোজনশালাতে খায়। তারা চীনের আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতনই একটি পরিবার।
মানুষের জীবনে মুল্য স্তরের প্রভাব বুঝবার জন্য, আমি, চাং পরিবারের পারিবারিক বাজেটকে ট্যাবুলার আকারে প্রস্তুত করেছি।

পারিবারিক বাজেট – মাসিক গড় (ইউয়ানে হিসাব)

বিষয়
১৯৬৫
১৯৭০
১৯৭৪
খাদ্যশস্য 
২৩.৬০  
২৫.৪৫
২৫.৪৫
মাংস, সব্জি প্রভৃতি
২২.৫০
৩০.০০
৩০.০০
বাইরে খাওয়া
১২.০০  
১২.০০
১২.০০  
চিনি, ফল এবং টুকিটাকি খাবার
১০.০০
১০.০০
৯.৫০
পোশাকআশাক
১৬.৭৫
২১.৩৫
২১.৩৫
ভাড়া
০.৮৪
০.৮৪
০.৮৪
জল
০.৩০
০.৩০
০.৩০
বিদ্যুৎ
১.০৫
১.০৫
১.০৫
গ্যাস
১.৬০
১.৬০
১.৬০
বাস-ভাড়া ইত্যাদি  
০.৯৬
০.৯৬
০.৯৬
বিনোদন
১.২০
১.২০
১.২০ 
 চুল কাটানো, স্নানের খরচ ইত্যাদি  
০.৫০
০.৫০
০.৫০
দিবা- নার্সারি
৩.৫০
৩.৫০
৩.৫০
সম্ভাব্য অন্যান্য খরচ
৫.০০
৫.০০
৫.০০
মোট
৯৯.৮০
১১৩.৭৫
১১৩.২৫


































খাবার এবং পোশাকআশাকের খরচ বাদ দিয়ে, যেগুলি এই দশ বছরে বেড়েছে বাচ্চাকাচ্চার জন্ম এবং প্রতিপালনের কারণে, বাকি অন্যান্য খরচ একই  থেকেছে। তাই পরিবারটি, প্রতি মাসে ৪০ ইউয়ান ব্যঙ্কে রাখতে পারে। এই টাকা দিয়ে, চাং পরিবার একটি রেডিও, একটি টিভি সেট, দুটো হাতঘড়ি এবং কিছু আসবাবপত্র কিনেছে। বাড়িটি যথেষ্ট পরিমাণে সাজনো-গোছানো।  
রবিবার, তারা সবাই বাড়িতে খায় এবং সেদিনের মুদি খরচ ২ ইউয়ান। এই টাকায় তারা কিকি পায়? ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত, পিকিং-এর খুচরা মূল্যের হিসাবে ২ ইউয়ানে নিম্নলিখিত খাবার জিনিসগুলি কিনতে পারতোঃ 


১৯৬৫ সালে,
শুয়োরের মাংস      ০.২৫ কেজি
ডিম             ০.২৫ কেজি
বোয়াল মাছ        ১.০০ কেজি
টফু             ০.৫০ কেজি
বাঁধাকপি          ০.৫০ কেজি

১৯৭৪ সালে,
শুয়রের মাংস    ০.২৫ কেজি
ডিম             ০.২৫ কেজি
বোয়াল মাছ        ১.০০ কেজি
টফু             ০.৫০ কেজি
বাঁধাকপি          ০.৫০ কেজি
আলু             ০.৫০ কেজি
পেঁয়াজকলি         ০.৫০ কেজি

অর্থাৎ বলা যায়, একই টাকায়, তাদের ১৯৭৪ সালের বাজারের থলিটা একটু বেশিই ভারি ছিল, যা দামের স্টেবিলিটিকেই প্রতিফলিত করে।

মুদিখানার পণ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে খরচ একই থেকেছে

পিকিং-এর মুদিখানা এবং বাজারে, বোর্ডে ঝোলানো, বহুবছর আগের, লাল, নীল বা সাদা কালিতে লেখা মুল্য তালিকা অপরিবর্তিত রয়েছে। কাউন্টারে প্রায়শয়ই শিশু কণ্ঠে শোনা যায়,

“অনুগ্রহ করে এক কেজি নুন দেবেন”
“অনুগ্রহ করে আধা কিলো সয়াবিন সস দেবেন”।

বাচ্চাটি দামের সাথে পরিচিত, প্রয়োজনীয় টাকা বের করে রাখে, এবং কোনপ্রকার ভুলের ভীতি ছাড়াই,  মালগুলি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
পিকিং-এর অধিকাংশ মুদি দোকানে, বহু বছর ধরে দাম অপরিবর্তিত আছে। এবং কয়েকটি একটু কমেছেও। এটি ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসের একটি সমীক্ষায়, ১৯৭০ সালের সাথে ১৯৬৫ সালের একটি তুলনা করে দেখানো হয়েছে।

খুচরা মুল্য, পিকিং
                   (কিলোগ্রাম পিছু, ইউয়ানে) 

বিষয়
১৯৬৫
১৯৭০
১৯৭৪
শুয়োরের মাংস
২.০০
১.৮০
১.৮০
ভেড়া/খাসীর মাংস
১.৪২
১.৪২
১.৪২
গরুর মাংস
১.৫০
১.৫০
১.৫০
কাটা মুরগি
২.০০
২.০০
২.০০
বোয়াল মাছ
০.৮৬
০.৮০
০.৮০
ডিম
২.০৮
১.৮০
১.৮০
টফু
০.১৬
০.১৬
০.১৬
বাঁধাকপি
০.০৫৮
০.০৫
০.০৫
আলু
০.২৪
০.২৪
০.২০
পেঁয়াজকলি
০.২০
০.২০
০.১৮

সারাবছর ধরে, পিকিং-এ যথেষ্ট পরিমাণে সব্জির সরবরাহ থাকে। টুংটান, শিটান এবং চাওইয়াংমেন-এর বড় বাজারগুলিতে, ১০০-র উপর বিভিন্ন ধরণের  সব্জি, সারাবছর ধরে পাওয়া যায় এবং এমনকি শীতকালেও ৫০-এর উপর বিভিন্নপ্রকারের সব্জি পাওয়া   যায়। সুদূর দক্ষিণ থেকে আসা অধিবাসীরা এমন সব্জি এখানে পায়, যা একসময়, তাদের অঞ্চলে পাওয়া যেত না, কিন্তু এখন পিকিং-এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কমিউনগুলোতে সেগুলি ফলানো হয়, যার মধ্যে কিছু বিদেশী সব্জিও আছে, যেমন আফ্রিকার একপ্রকারের পালং, ইউরোপ এবং আমেরিকার লেটুস, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কালকাসুন্দ এবং জাপানের একপ্রকারের দেশীয় রাইসরষে।
মাথাপিছু দৈনিক তাজা সব্জি-গ্রহণ ০.৫ কিলো, যাকিনা চীনের মুক্তির সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। ঋতু ভেদে কিছু সমন্বয়সাধন করা হয়, কিন্তু গত দশ বছরের গড় ধরলে তা, কিলো প্রতি ০.০৮ ইউয়ান-ই থেকেছে। টমেটো এবং চীনা বাঁধাকপি, তাদের ঋতুতে, রাস্তার ধারে স্তুপ করে রাখা থাকে আর প্রতি ২-৩ কিলো বিক্রি হয় ০.১০ ইউয়ান দরে।           

জনগণের ভীষণ প্রিয়, সয়াবিনের তৈরি সমস্ত প্রকার পণ্যের বিক্রয় মুল্য ১৯৫৬ সাল থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।

অন্যান্য দৈনন্দিন জরুরি দ্রব্যর দাম স্টেবল, কয়েকটির দাম লক্ষণীয় ভাবে কমেছে

চাং পরিবারের বাজেট থেকে আমরা দেখতে পেলাম, খাদ্যশস্য এবং জ্বালানির দাম, ১৯৬৫ সালের মতনই আছে ১৯৭৪ সালেও। অধিকন্তু, এগুলি স্টেবল আছে মুক্তির পরের বছরগুলি থেকে। উদাহরণ হিসাবে, ১৯৫২ সালে ১৫ ইউয়ান দিয়ে, পিকিং-এর বাজার থেকে যে যে মালগুলি কেনা যেত, তা নিচের ডায়াগ্রামে দেখানো হল। 

১৯৫২ সালে ১৫ RMB দিয়ে যে মালগুলি কেনা যেত


চালঃ              ১২.৫ কিলো
সাদা আটাঃ        ৫ কিলো 
নুনঃ              ৫০০ গ্রাম
কয়লাঃ            ২৫ কিলো
এনামেলের গামলাঃ   ১টা 
সাবানঃ             ২টি কেক
পেনিসিলিনঃ         ১ ভায়াল
দেশলাইঃ            ২ বাক্স
কেরোসিনঃ          ১২.৫ কিলো
চিনিঃ               ৫০০ গ্রাম
সাদা সুতির কাপড়ঃ   ৩.৩৩ মিটার


এখন, ২৩ বছর পরে, একই পরিমাণ টাকা দিয়ে সেই সমস্ত জিনিস একই পরিমাণে কেনা যায়, সাথে ২.৫ কিলো ময়দা।

খাদ্যশ্যের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহ এবং তাকে বাজারজাত করবার পদ্ধতি গড়ে ওঠে ১৯৫৩ সালে। তখন থেকে, চাষিদের আয় বাড়ানোর জন্য, রাষ্ট্র বহুবার খাদ্যশস্যের ক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে, শহরে সেগুলির খুচরো মুল্যকে মোটামুটি একই স্তরে রেখেছে। চীনের ক্রেতারা, বিশ্ববাজারে, খাদ্যশস্যের দামের বর্তমান বৃদ্ধির প্রবণতার থেকে সুরক্ষিত। উদাহরণস্বরূপ, চীনের প্রধান খাদ্যশস্যের গড় খুচরো মুল্য এরকম,
গমের আটা (মাঝারি মানের)–০.৩৬ ইউয়ান/কিলো
চাল                  -০.২৮৬   “

উৎপাদককে দেওয়া মূল্যের প্রায় সমান মূল্যই রয়েছে এগুলির। মজুতের খরচ, মাল বহনের খরচ এবং বানিজ্যিক বিভাগের দ্বারা মাল ঘাঁটাঘাঁটির সময়ে যে ক্ষতি হয়, তার সমস্তটাই রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির দ্বারা পুষিয়ে দেওয়া হয়, যার পরিমাণ, প্রতি ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের জন্য ২ কোটি ৫০ লক্ষ ইউয়ান।

পোশাকআশাকের জন্য, ক্রমবর্ধমান ভ্যারাইটিতে সুতির মাল পাওয়া যাচ্ছে এবং উল, রেশম এবং সিনথেটিক মালও খুব দ্রুত বেড়েছে। প্রধান আইটেম যেমন, তুরপুন, সুতির শিরাল বস্ত্র(গাবারডাইন) এবং ছাপানো ও সাদা সুতির কাপড়ের দামের হেরফের হয় নি। উদাহরণস্বরূপ, পিকিং, তিয়েনৎসিন এবং শাংহাইতে, ১ চিহ (আধ মিটার) সাদা সুতির কাপড়ের দাম, বছরের পর বছর ধরে ০.২৮ ইউয়ান রয়েছে যা, এক প্যাকেট সাধারণ সিগারেটের দামের সমতুল্য।
পরিবারের প্রয়োজনীয় মাল এবং মনিহারী মাল, গুণগত এবং পরিমাণগত দিক থেকে অনেক উন্নত হয়েছে – তবে হয় দাম একই আছে নতুবা, কিছু ক্ষেত্রে কমেছে। নিচের টেবিল, পিকিং-এ এরকম কিছু জিনিসের মুল্য দেখাচ্ছে।

বিষয়
বিশদ বিবরণ
একক/
পরিমাণ
১৯৬৫
(ইউয়ান)
১৯৭০
(ইউয়ান)
১৯৭৪ (ইউয়ান)
এনামেলের
গামলা
৩২ সেমি
১.৮০
১.৮০
১.৬৬
অ্যালুমিনিয়াম – এর লাঞ্চ বক্স 
১২ X ১২ সেমি
১.৩৬
১.৩২
১.৩২
তাপরোধী ফ্লাস্কস
৫ পাউন্ড, বাঁশের খোল
২.৫১
২.১০
২.১০
এনামেলের মগ
৯ সেমি
০.৯৬
০.৮৩
০.৮৩
অ্যালার্ম  ঘড়ি
-   
১৫.৮০
৮.০০
৮.০০
জামাকাপড় কাচবার সাবান
“লাইটহাউস”
০.২৫
০.২৫
০.২২
দাঁতের-মাজন  
“বেইহাই”
০.৪২
০.৪২
০.৪২
ঝর্ণা কলম
“গোল্ড স্টার”
১.২৫
১.২৫
১.২৫
কলমের কালি
৫৭ সিসি
১ বোতল
০.১৮
০.১৮
০.১৮
লিখবার কাগজ
৫০ শিট, পাতলা
১ প্যাড
০.১৫
০.১৫
০.১৫

গুণমান এবং দামের পরেই, টেকসই হওয়াওতেও ছিল একই ধারা। এগুলির মধ্যে ছিল, হাতঘড়ি, রেডিও, বাইসাইকেল, সেলাই মেশিন, ক্যামেরা প্রভৃতি। তুমি প্রায়শই শুনবে লোকে বলছে, “ক’টা মাস অপেক্ষা করো, বাজারে এর থেকেও সস্তা আর ভালো মাল আসতে পারে”। তারা হয়তো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ট্রাঞ্জিস্টর রেডিও-র কথা বলছে যেগুলির, আরও উন্নত কিন্তু কম খরচসাপেক্ষ মডেল, প্রতি বছরই আসে। এগুলির ক্ষেত্রে খুচরো মুল্য, ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে গড়ে ৪০% কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে ওষুধের দাম। আজকে চীনে, ওষুধের খরচ, ১৯৫০ সালের দামের, মুক্তির পরের বছরের দামের, ৫ ভাগের ১ ভাগ। তখন যা ছিল ৫০ সেন্ট মূল্যের ওষুধ, তার জন্য আজকে দিতে হয় ১০ সেন্ট। 
......ক্রমশঃ 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে লেনিনের সংগ্রাম - অনুবাদে রুমা নিয়োগী(প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব)

আদিম কমিউন থেকে বুর্জোয়া রাষ্ট্র পর্যন্ত মানব সমাজের যাত্রার ধারা বেয়ে রাষ্ট্রের শ্রেণি চরিত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের উৎস ও সমাধানের খোঁজে – একটি প্রস্তাবনা ;প্রয়াসে চঞ্চল মুন্সী এবং চারুদত্ত নীহারিকা রজত

রুশ বিপ্লবের বিকাশ পথ < মূল হিন্দি রচনা ডঃ রাম কবীন্দ্র; বাংলায় অনুবাদে - চন্দন দত্ত>