ইস্ক্রার সম্পাদকীয় বোর্ডের ঘোষণা
ভ, ই, লেনিন
ইস্ক্রার সম্পাদকীয় বোর্ডের ঘোষণা
সম্পাদকীয় বোর্ডের নামে
ইস্ক্রার প্রথম সংখ্যা; এটি জার্মানির লিপজিগ-এর ছাপাখানায় ছাপা হয়েছিল |
[অনুবাদে - চারুদত্ত নীহারিকা রজত ও কৌশিক রাউথ রায়;
সমগ্র অনুবাদটি দেখে দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং সংশোধনে সহায়তা করেছেন চন্দন দত্ত, অলকা ব্যানার্জী, চঞ্চল মুন্সী]
সমগ্র অনুবাদটি দেখে দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং সংশোধনে সহায়তা করেছেন চন্দন দত্ত, অলকা ব্যানার্জী, চঞ্চল মুন্সী]
লিখিতঃ
সেপ্টেম্বর, ১৯০০
প্রকাশকালঃ
ইস্ক্রা-র পক্ষ থেকে একটি স্বতন্ত্র লিফলেটে প্রথম প্রকাশ ১৯০০ সালে
ইস্ক্রা নামের একটি রাজনৈতিক সংবাদপত্রের প্রকাশনার বিষয়ে সহমত
হয়ে, যার লক্ষ্যে আমরা লড়াই করছি এবং আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে নিজেদের যে বোঝাপড়া রয়েছে,
সেই লক্ষ্য সম্পর্কে কিছু কথা বলাটা আমরা জরুরী মনে করছি।
রূশীয় শ্রমিক শ্রেণী এবং রূশীয় সমাজ-গণতন্ত্রের ইতিহাসের এক
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে আমরা অতিক্রম করছি। বিগত কয়েক বছর চিহ্নিত
হয়েছে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে, সমাজ-গণতন্ত্রের এক অত্যাশ্চর্য ও দ্রুত প্রসারের
দ্বারা এবং সামাজিক ধারণার এই ঝোঁকের সাথে পরিচিত হওয়া, শিল্প-প্রোলেতারিয়েতদের একটি
স্বতন্ত্র আন্দোলন যা, তার শোষকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে ও লড়াই করতে শুরু করেছে এবং
সমাজতন্ত্রের দিকে আগ্রহের সাথে এগিয়ে চলেছে। সর্বত্র, শ্রমিকদের এবং সমাজ-গণতন্ত্রী
বুদ্ধিজীবীদের স্টাডি সার্কেল গজিয়ে উঠছে, স্থানীয় বিক্ষোভগুলির লিফলেট বিরাট অঞ্চল
জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সমাজ-গণতন্ত্রী সাহিত্যের চাহিদা, যোগানের থেকে অনেক বেশি
হারে বাড়ছে ; এবং তীব্র সরকারি ধরপাকড়, এই
আন্দোলনকে নিবৃত্ত করতে অক্ষম। কয়েদখানা এবং নির্বাসনের স্থানগুলি ভর্তি হয়ে
উপচে পড়ছে। সমগ্র রাশিয়াতে একটা মাসও এমন যায় না যখন, শোনা যায় না যে, সমাজতন্ত্রীরা
“জালে ধরা পড়েছে”। কিন্তু আন্দোলন বাড়ছে, এটি আরও বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে, এটি শ্রমিক
শ্রেণি ভিতরে, আরও বেশি বেশি করে গভীরে প্রবেশ করছে এবং জনগণের দৃষ্টিকে আরও বেশি করে
আকর্ষিত করছে। রাশিয়ার সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ ও সামাজিক চিন্তার ইতিহাস এবং রাশিয়ার
বিপ্লবী আন্দোলন এই বিষয়ের নিশ্চয়তা হিসাবে কাজ করছে যে, শ্রমিক শ্রেণীর সমাজ-গণতান্ত্রিক
আন্দোলন গড়ে উঠবে এবং পরিশেষে এটি, সেই সমস্ত বাধাকে কাটিয়ে উঠবে, যার তারা মুখোমুখি
হবে।
অপরদিকে, কেউ এভাবে বলতে পারেন যে, আমাদের আন্দোলনের মুখ্য
যে বিশিষ্টতা, যেটি ইদানিংকালে নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত হয়েছে, সেটি হলো একটি অনৈক্যের
দশাগ্রস্ত এবং চরিত্রের দিক থেকে অপেশাদারি। স্থানীয় স্টাডি-সার্কেলগুলি স্বাধীন ভাবে
গজিয়ে উঠছে এবং সেগুলি একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন। যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল,
সেই সার্কেলগুলি, যেগুলি অতীতেও কাজ করতো এবং বর্তমানেও একই জেলায় কাজ করছে সেগুলিতে,
কোনও ঐতিহ্যের প্রতিষ্ঠা হয়নি এবং ধারাবাহিকতা
কে পালন করা হয়না ; স্থানীয় প্রকাশনাগুলিও এই অনৈক্যকে প্রতিফলিত করে এবং রাশিয়ার সমাজ-গণতন্ত্র
ইতিমধ্যেই যা অর্জন করেছে, তার সাথে যোগাযোগের অভাব বর্তমান।
আন্দোলন যে দাবি তার শক্তিতে এবং বিস্তারে উত্থাপিত করছে, তার
সাথে এই ধরণের অনৈক্যের অবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং আমাদের মতে, এটি এই বিকাশের একটি
সমালোচনার জায়গা তৈরি করছে। আন্দোলনের মধ্যেই এক অপ্রতিরোধ্য শক্তির সাথে অনুভুত হচ্ছে
সংহতি এবং একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা
; হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে, একটি উচ্চতর স্তরে উঠবার ক্রান্তিকালীন প্রয়োজনীয়তা, প্রায়োগিক
ক্ষেত্রে কর্মরত সমাজ-গণতন্ত্রীরা সর্বত্র অনুভব করছেন বলে মনে হচ্ছে না। বিপরীতক্রমে,
অধিকাংশ সার্কেলগুলির মধ্যে একটি আদর্শগত দোদুল্যমানতা দেখা যাচ্ছে, “মার্কসবাদের সমালোচনা”
এবং
“বার্নস্তাইনবাদ”(*১)-এর প্রতি একটি চটকদারি মোহ, তথাকথিত “অর্থনীতিবাদী”
দৃষ্টিভঙ্গিগত
ঝোঁকের প্রসার ; এবং যেটি অবিচ্ছেদ্য ভাবে এর সাথে সংযুক্ত হয়ে রয়েছে – আন্দোলনকে তার
নিম্নতর স্তরে রেখে দেবার চেষ্টা, একটি বিপ্লবী পার্টি গঠনের কাজকে পিছনে ঠেলে দেওয়া,
যেটি সমগ্র জনতার সংগ্রামকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এটা ঘটনা, এই ধরণের
আদর্শগত দোদুল্যমানতা, যা রূশী সমাজ-গণতন্ত্রীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায় ; সেই সঙ্কীর্ণ
বাস্তববাদীতা, সামগ্রিক ভাবে আন্দোলনের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা হতে যা বিচ্ছিন্ন, আন্দোলনকে
ভুল পথে ঘুরিয়ে দেবার মতো বিপদের লক্ষণ। আমাদের অধিকাংশ সংগঠনেরই, পরিস্থিতি সম্পর্কে
কোনও প্রত্যক্ষ ধারণা নেই। উপরন্তু, লেখাপত্রের কাজও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা এই বিষয়টিকেই
প্রতিষ্ঠিত করে। এখানে শুধু সেই মতবিশ্বাসকে উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে যাকে, ইতিমধ্যেই
চতুর্থ আইনসম্মত প্রতিবাদ বলা হচ্ছে ; “রাবোচায়া মিসিল”(*২)
সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯-এর প্রতি স্বতন্ত্র ক্রোড়পত্র, যাকে বহুল বিজ্ঞাপনের সাথে প্রকাশ
করা হয়েছিল, যে ঝোঁক সমগ্র “রাবোচায়া মিসিল”-এর
মধ্যে প্রবেশ করেছিল ; এবং অবশেষে সেন্ট পিটারসবুরগ-এর শ্রমিক শ্রেণির আত্ম-মুক্তি
গ্রুপ,(*৩) অর্থনীতিবাদের(*৪) স্পিরিটকে গ্রহণ করেছিল। এবং “রাবোচায়া ডেলো”(*৫)-র
দৃঢ় প্রত্যয় সম্পূর্ণ অসত্য যে, এই মতবিশ্বাস শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মতের প্রতিনিধিত্ব
করেছে ; “রাবোচায়া মিসিল” যে ঝোঁকের
প্রতিনিধিত্ব করেছে, তা মনের সংশয়কেই প্রকাশ করে এবং প্রকাশ করে সম্পাদকের অ-কুশলীপনাকে
; এবং তা রূশী শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনের বিকাশের ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ ঝোঁকের প্রকাশ
নয়।
একইসঙ্গে, সেই সমস্ত লেখকদের, যাদেরকে পাঠককুল এতৎযাবৎকাল,
মার্কসীয় ভাবনার উজ্জ্বল মুখ বলেই জেনে আসছিলেন, তাদের লেখায় বুর্জোয়া ভাবনাচিন্তা
সংরক্ষণের ক্রমবর্ধমান ঝোঁক পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এই সমস্ত কিছুর ফলাফলস্বরূপ উদ্ভুত দোনোমোনো ভাব এবং নৈরাজ্যের
জন্যই, ভূতপূর্ব মার্কসবাদী, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, ভূতপূর্ব সাম্যবাদী বার্নস্তাইন,
তার সাফল্যের পুনঃমূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রেসকে বলতে পারেন যে, রাশিয়ার বেশিরভাগ সোশ্যাল
ডেমোক্র্যাটরাই তার অনুগামী।
আমরা পরিস্থিতির গভীরতাকে বাড়িয়ে দেখাতে চাই না কিন্তু, এগুলির
থেকে চোখ বন্ধ করে রাখলে তা, অপরিমেয় ভাবে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এই কারণেই, আমরা
“শ্রমিক মুক্তি গ্রুপ”-এর সিদ্ধান্তকে এখন আন্তরিক ভাবে স্বাগত জানাচ্ছি যাতে করে,
এর লেখাপত্রের কাজকে আবার শুরু করা যায় এবং সমাজ-গণতন্ত্রকে বিকৃত ও দুষিত করবার প্রচেষ্টার
বিরুদ্ধে একটি সুব্যবস্থিত সংগ্রাম শুরু করা যায়।
পরবর্তী অংশ থেকে আমরা এই কার্যকরী সিদ্ধান্ত টানতে পারি :
আমরা, রূশী সমাজ-গণতন্ত্রীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হবো এবং আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ধাবিত
করবো একটি শক্তিশালী পার্টি গঠনের লক্ষ্যে, যা বিপ্লবী সমাজ-গণতন্ত্র নামক একটি মাত্র
পতাকার তলায় সংগ্রাম পরিচালনা করবে। ১৮৯৮ সালের সম্মেলন, যার থেকে রুশী সমাজ-গণতন্ত্রী
শ্রমিক পার্টি (*৬) গঠিত হয়েছিল এবং তার ইশতেহার প্রকাশ করেছিল, এই কাজটিই নির্দিষ্ট
ভাবে আমাদের সামনে রেখেছে।
আমরা নিজেদের এই দলের সদস্য বলেই মনে করি ; আমরা ইশতেহারে(*৭) বর্ণিত
মূলগত ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি এবং তার লক্ষ্য সম্পর্কে জন-ঘোষণার উদ্দেশ্যকে
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। এরই সুত্র ধরে, আমরা দলের সদস্য হিসাবে আমাদের আশু এবং প্রত্যক্ষ
কার্যক্রম সম্পর্কে এই প্রশ্নগুলিকে উত্থাপিত করতে চাই:
দলকে, তার সম্ভাব্য সবচেয়ে
সবল ভিত্তির উপর দাঁড় করাবার জন্য কোন পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করবো?
এই প্রশ্নের উত্তরটা সাধারণত এরকম দেওয়া হয় যে, একটি নতুন কেন্দ্রীয়
কমিটি নির্বাচন করো এবং তাকে নির্দেশ দাও পার্টি-মুখপত্রের প্রকাশনাকে আবার শুরু করতে।
কিন্তু, সংশয়ের এই পর্যায়ে, যার মধ্যে দিয়ে আমরা এখন অতিক্রম করছি, এরকম সরল একটি পদ্ধতি
একেবারেই উপযুক্ত নয়।
পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত ও সংহত করবার অর্থ হচ্ছে, সমগ্র রূশী সমাজ-গণতন্ত্রীদের
মধ্যে একতাকে সংহত করা এবং উপরে উল্লেখিত কারণেই, এই একতাকে হুকুম জারি করে অর্জন করা
যাবে না, কিছু সদস্যের মিটিং-এর মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েও তাকে আনা যাবে
না ; একে খেটে অর্জন করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে জরুরী হল, একটি শক্তপোক্ত আদর্শগত একতার
জন্য সংগ্রাম করা, যা মতভেদ এবং সংশয়কে দূর করবে - খোলাখুলি ভাবে বলতে গেলে – যা রূশী
সমাজ-গণতন্ত্রীদের মধ্যে বর্তমানে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। এই আদর্শগত একতাকে, একটি
পার্টি-প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে সংহত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা সক্রিয় হবো, আন্দোলনের
সমস্ত কেন্দ্র এবং লড়াইয়ের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবার জন্য এবং সম্পূর্ণ ও যথাসময়ে
লড়াইয়ের তথ্য পৌঁছে দেবার জন্য, আমাদের সংবাদপত্র ও সাময়িকীগুলি রাশিয়ার সমস্ত অংশে
নিয়মিতভাবে সরবরাহ করবার লক্ষ্যে, একটি সাংগঠনিক কাঠামো অর্জন করতে। একমাত্র যখন এইরূপ
একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হবে, একমাত্র যখন একটি রূশী সমাজতান্ত্রিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হবে তখনই পার্টি একটি সুন্দর ভিত্তি
পাবে ও একটি বাস্তব সত্য হয়ে উঠবে এবং সুতরাং,
হয়ে উঠবে একটি প্রবল শক্তি।
আমরা আমাদের প্রচেষ্টাকে প্রথম ভাগের কাজের জন্য উৎসর্গ করতে
চাই, অর্থাৎ একটি সাধারণ সাহিত্য সৃষ্টি করতে চাই, তারা আদর্শে থাকবে অবিচল এবং সক্ষম
হবে বিপ্লবী সমাজ-গণতন্ত্রকে ঐক্যবদ্ধ করতে, কারণ আমরা মনে করি, এটিই আজকের দিনের লড়াইয়ের
মূল চাহিদা এবং পার্টির কার্যকলাপকে পুনরায় শুরু করবার লক্ষ্যে জরুরী প্রাথমিক পদক্ষেপ।
আমরা আগেই যেরকম বলেছি, রূশী সমাজ-গণতন্ত্রীদের আদর্শগত ঐক্যকে
সৃষ্টি করা বাকি রয়েছে এবং আমাদের দিক থেকে, আমাদের মতে, বর্তমান সময়ের “অর্থনীতিবাদী” “বার্নস্তাইনপন্থী”
এবং
“সমালোচক”(*৮)-দের দ্বারা উত্থাপিত, নীতি এবং কৌশল সম্পর্কিত মূলগত প্রশ্নগুলির,
একটি খোলামেলা এবং সার্বজনীন আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের এক হবার আগে এবং এক হবার জন্য,
সর্বপ্রথম আমাদের একটি পোক্ত সীমারেখা ঠিক করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের একতা হয়ে যাবে
বিশুদ্ধ কাল্পনিক, এটি বিরাজমান সংশয়কে লুকিয়ে রাখবে এবং প্রগতিশীলতার স্বার্থে এগুলিকে
বাতিল করা থেকে আটকে রাখবে। সুতরাং, এটা বোঝাই যাচ্ছে যে, আমরা আমাদের প্রকাশনাকে,
বিভিন্ন মতের একটি সাধারণ গুদামঘর বানাতে চাইছি না। বরঞ্চ উলটোদিকে, আমরা একটি কঠোর
ও সংজ্ঞায়িত পথেই আমাদের কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত করবো। এই প্রবণতাকে মার্কসবাদের ভাষায়
প্রকাশ করা যেতে পারে এবং একথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, আমরা মার্কস এবং এঙ্গেলসের ধারণার
উপযুক্ত বিকাশের পক্ষে এবং জোরের সাথে বাতিল করছি বাকচাতুরীপূর্ণ, ফালতু এবং সুবিধাবাদী
সংশোধনকে, যেগুলি এডওয়ার্ড বার্নস্তাইন, পি, স্ত্রুভে(*৯) এবং আরও অনেকে একটা চলতি
ধারা হিসাবে প্রবর্তন করেছেন। কিন্তু যদিও আমরা, আমাদের নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা
থেকে সমস্ত প্রশ্নের উপর আলোচনা করবো, আমরা আমাদের কলামে, কমরেডদের মধ্যে তর্কযুদ্ধকে
স্থান দেবো। সমগ্র রূশী সমাজ-গণতন্ত্রী এবং শ্রেণি সচেতন শ্রমিকদের সামনে খোলামেলা
তর্কযুদ্ধ জরুরী এবং প্রত্যাশিত। বর্তমান মতপার্থক্যের গভীরতাকে স্পষ্ট করা, বিতর্কিত
প্রশ্নগুলির সমস্ত দিক থেকে আলোচনা করা যাতে করে শুধুমাত্র বিভিন্ন মত নয়, এমনকি বিভিন্ন
আঞ্চলিক বা বৈপ্লবিক আন্দোলনের বিভিন্ন দক্ষতার চরমপন্থী অবস্থানের মধ্যে যে সকল প্রতিনিধিরা
অবশ্যম্ভাবী ভাবে পড়েন, সেগুলিকে প্রতিহত করা যায়। অবশ্যই, উপরে যেরকম বলা হয়েছে, আমরা
প্রকাশ্য মতবিরোধের মধ্যে খোলামেলা তর্কযুদ্ধের অনুপস্থিতিকে, যে প্রচেষ্টা মূলগত প্রশ্নগুলির
বিভিন্নতাকে আড়াল করে, তাকে আজকের দিনের আন্দোলনের একটি খামতি হিসাবে মনে করি।
আমরা অবশ্যই বিস্তারে সমস্ত প্রশ্ন এবং বিষয় বস্তুর পয়েন্টগুলির,
যেগুলি আমাদের প্রকাশনার প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে, সেগুলির উল্লেখ করবো না এই সাধারণ
ধারণা থেকে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এক রাজনৈতিক সংবাদপত্রের যা হওয়া উচিত, এটিও তাই।
আমরা সর্বোচ্চ রূপে চেষ্টা করবো যাতে, প্রত্যেক রূশী কমরেড
আমাদের প্রকাশনাকে তার নিজের বলে মনে করে, যাতে সমস্ত গ্রুপ, আন্দোলনের সমস্ত প্রকারের
তথ্যকে সকলের সামনে আনে, যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার সাথে তাকে মেলাতে
পারবে, নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারবে, তার রাজনৈতিক সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ
করতে পারবে এবং সমাজ-গণতন্ত্রী সংখ্যার বিষয়ে তাদের মতামতকে ব্যক্ত করতে পারবে ; এক
কথায়, তারা আন্দোলনে যা কিছু অবদান রাখবে এবং যা কিছু তারা আন্দোলন থেকে শিখবে, তা-ই
তারা সকলের সাথে ভাগ করে নিতে পারবে। একমাত্র এইভাবেই, একটি আদর্শ সারা-রাশিয়া সমাজ-গণতন্ত্রী
পত্রিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। একমাত্র এই ধরণের প্রকাশনাই, রাজনৈতিক সংগ্রামকে উচ্চতর
মার্গে নিয়ে যেতে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। “সীমাকে আরও প্রসারিত করো এবং আমাদের প্রচারকদের
বিক্ষোভ ও সাংগঠনিক কাজকর্মের সারবস্তুকে আরও ছড়িয়ে দাও” – পি,বি,অ্যাক্সেল
রডের এই কথাগুলি, রূশী সমাজ-গণতন্ত্রীদের স্লোগান হিসাবে কাজ করবে, যা তার আশু ভবিষ্যতের
কর্মধারাকে প্রকাশ করবে এবং আমরা এই স্লোগানকে আমাদের প্রকাশনার প্রোগ্রামের জন্য গ্রহণ
করছি।
আমরা শুধুমাত্র সমাজতন্ত্রী এবং শ্রেণি সচেতন শ্রমিকদের কাছেই
আবেদন করছি না ; আমরা ডাক পাঠাচ্ছি তাদের সকলের কাছে, যারা বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার
দ্বারা নিষ্পেষিত হচ্ছে ; আমরা আমাদের কলামগুলিকে তাদের অনুমোদনের জন্য পেশ করছি যাতে
তারা, রূশী স্বৈরাচারের প্রতি তাদের সমস্ত ঘৃণাকে প্রকাশ করতে পারে।
যারা মনে করেন যে, সমাজ-গণতন্ত্র হল একটি সংগঠন যা কেবলমাত্র,
সর্বহারার স্বতঃস্ফূর্ত, স্থানীয়, সামান্য বিক্ষোভ সংগ্রামের সেবা করে এবং সাথে প্রকাশ
করে শ্রমিক শ্রেণির একটি সাহিত্য পত্রিকা, ব্যাস "এইটুকুই”, আমরা
সমাজ-গণতন্ত্রকে এই ভাবে বুঝি না; আমরা এটিকে একটি বিপ্লবী পার্টি বলে মনে করি, যা
শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনের সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত এবং যা চরমবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত।
একমাত্র যখন এই রকম একটি পার্টিতে সর্বহারারা সংগঠিত হবে, যে সর্বহারারা বর্তমান রাশিয়ার
সবচেয়ে বিপ্লবী শ্রেণী, তখনই সে, তার উপরে ন্যস্ত ঐতিহাসিক কাজকে সফল করবার মতন জায়গায়
আসতে পারবে। সমস্ত গণতান্ত্রিক উপাদানকে, এই পতাকার তলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং কঠোর
সংগ্রামের মুকুটকে শিরোধার্য করতে হবে। যে লড়াই
লড়তে গিয়ে বহু প্রজন্ম পরাজিত হয়েছে সেই লড়াইয়ের বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে, এই ঘৃণ্য
রাজত্বের পতনের উপর দিয়ে।
সংবাদপত্রের মাপ একপাতা থেকে দুপাতার মধ্যে থাকবে।
রূশী সংবাদপত্রের গুপ্ত ভাবে কাজ করাকে মাথায় রেখে, প্রকাশনার কোনও নির্দিষ্ট তারিখ থাকবে না।
[মূল
বক্তব্যকে অক্ষুণ্ণ রেখে ঈষৎ সম্পাদিত; আক্ষরিক অনুবাদের বদলে ভাবানুবাদকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে]
ইস্ক্রার সম্পাদকমণ্ডলীর ছবি
এ, এন, পোত্রেসভ |
জর্জি ভ্যালেন্তিনোভিচ প্লেখানভ |
জুলিয়াস মারতভ |
ভ্লাদিমীর ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন |
পাভেল অ্যাক্সেলরড |
ভেরা ইভানোভনা জাসুলিচ |
পাঠ সহায়কঃ
(*১) বার্নস্তাইনবাদঃ এডওয়ার্ড বার্নস্তাইন। একজন সংশোধনবাদী। SPD-র সদস্য ছিলেন। তিনি "violent revolution"-এর তত্ত্বকে বাতিল করেন। প্রোলেতারিয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বদলে তিনি সমাজ-গণতন্ত্রকে একটি
নিয়মতান্ত্রিক ফর্মে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, যা মার্কসবাদের বিরোধী।
(*) চতুর্থ আইনসম্মত প্রতিবাদঃ এ বিষয়ে জানা নেই; কেউ সহায়তা করলে (তথ্য প্রমাণ সহ) আমরা সেটিকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করে নেবো।
(*২) রাবোচায়া মিসিলঃ ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সমাজ-গণতন্ত্রীদের পত্রিকা। এই পত্রিকা মূলত সেন্ট পিটারসবুরগ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হতো। এরা স্বতঃস্ফূর্ততার তত্ত্বে বিশ্বাস করতো এবং স্বাধীন ভাবে কাজ করতো। ১৯০২ সালে এই পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।
(*৩) আত্ম-মুক্তি গ্রুপঃ ১৮৯৮ সালে, সেন্ট পিটারসবুরগ-এ,, কয়েক মাসের জন্য গড়ে ওঠা একটি অর্থনীতিবাদী গ্রুপ।
(*৪) অর্থনীতিবাদঃ একটি মতবাদ যা অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়ার আন্দোলনকেই প্রধান গুরুত্ব দেয় এবং শ্রেণি সংগ্রামকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দেয়। এটি একপ্রকারের স্বতঃস্ফূর্ততার মতবাদ।
বিস্তারে জানবার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
"অর্থনীতিবাদের" বিরুদ্ধে লেনিনের লড়াই; লেনিনের সংবাদপত্র "ইস্ক্রা"-র আত্মপ্রকাশ
(*৫) রাবোচায়া ডেলোঃ অনাবাসী রুশী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের পত্রিকা। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা, ১৯০২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। অর্থনীতিবাদী মতের পত্রিকা। RSDLP-র দ্বিতীয় সম্মেলনে এটি সরাসরি ভাবে দক্ষিণপন্থী লাইন গ্রহণ করে।
(*৬) রূশী সমাজ-গণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টি (RSDLP): ১৮৯৮ সালের, ১-লা মার্চ তারিখে প্রতিষ্ঠিত, রাশিয়ার বিভিন্ন বিপ্লবী গ্রুপকে নিয়ে গঠিত একটি মার্কসবাদী (সাধারণভাবে) গুপ্ত-পার্টি। কেন্দ্রীয় দপ্তর ছিল পেত্রোগার্ড। এটি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের affiliation পেয়েছিল। ১৯১২ সালে এটি dissolved হয়ে যায়।
(*৭) ইশতেহারঃ এখানে RSDLP-র প্রথম সম্মেলনের ইশতেহারের কথা বলা হচ্ছে যেখানে সারা রাশিয়ার বিপ্লবী গ্রুপগুলিকে RSDLP-র ব্যানারের তলায় ঐক্যবদ্ধ করবার কথা বলা হয়েছিল।
(*৮) "সমালোচক": এখানে অর্থনীতিবাদী এবং বার্নস্তাইনপন্থীদের মধ্যেকার ইস্ক্রার সমালোচকদের কথা বলা হয়েছে।
(*৯) পি, স্ত্রুভেঃ রূশী সংশোধনবাদী । উনি রূশী আইনি পত্রিকা "নভয়া স্লোভো" এবং "রূশকায়া মিসল"-র সম্পাদক হিসাবেও কাজ করেছেন। "সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক পার্টি" -র প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত RSDLP-র সংবিধান তারই লেখা বলে ধারণা।
ইস্ক্রা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য নীচের লিংকে ক্লিক ক্রুনঃ
ইস্ক্রা ও লেনিন
নিয়মতান্ত্রিক ফর্মে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, যা মার্কসবাদের বিরোধী।
(*) চতুর্থ আইনসম্মত প্রতিবাদঃ এ বিষয়ে জানা নেই; কেউ সহায়তা করলে (তথ্য প্রমাণ সহ) আমরা সেটিকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করে নেবো।
(*২) রাবোচায়া মিসিলঃ ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সমাজ-গণতন্ত্রীদের পত্রিকা। এই পত্রিকা মূলত সেন্ট পিটারসবুরগ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হতো। এরা স্বতঃস্ফূর্ততার তত্ত্বে বিশ্বাস করতো এবং স্বাধীন ভাবে কাজ করতো। ১৯০২ সালে এই পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।
(*৩) আত্ম-মুক্তি গ্রুপঃ ১৮৯৮ সালে, সেন্ট পিটারসবুরগ-এ,, কয়েক মাসের জন্য গড়ে ওঠা একটি অর্থনীতিবাদী গ্রুপ।
(*৪) অর্থনীতিবাদঃ একটি মতবাদ যা অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়ার আন্দোলনকেই প্রধান গুরুত্ব দেয় এবং শ্রেণি সংগ্রামকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দেয়। এটি একপ্রকারের স্বতঃস্ফূর্ততার মতবাদ।
বিস্তারে জানবার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
"অর্থনীতিবাদের" বিরুদ্ধে লেনিনের লড়াই; লেনিনের সংবাদপত্র "ইস্ক্রা"-র আত্মপ্রকাশ
(*৫) রাবোচায়া ডেলোঃ অনাবাসী রুশী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের পত্রিকা। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা, ১৯০২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। অর্থনীতিবাদী মতের পত্রিকা। RSDLP-র দ্বিতীয় সম্মেলনে এটি সরাসরি ভাবে দক্ষিণপন্থী লাইন গ্রহণ করে।
(*৬) রূশী সমাজ-গণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টি (RSDLP): ১৮৯৮ সালের, ১-লা মার্চ তারিখে প্রতিষ্ঠিত, রাশিয়ার বিভিন্ন বিপ্লবী গ্রুপকে নিয়ে গঠিত একটি মার্কসবাদী (সাধারণভাবে) গুপ্ত-পার্টি। কেন্দ্রীয় দপ্তর ছিল পেত্রোগার্ড। এটি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের affiliation পেয়েছিল। ১৯১২ সালে এটি dissolved হয়ে যায়।
(*৭) ইশতেহারঃ এখানে RSDLP-র প্রথম সম্মেলনের ইশতেহারের কথা বলা হচ্ছে যেখানে সারা রাশিয়ার বিপ্লবী গ্রুপগুলিকে RSDLP-র ব্যানারের তলায় ঐক্যবদ্ধ করবার কথা বলা হয়েছিল।
(*৮) "সমালোচক": এখানে অর্থনীতিবাদী এবং বার্নস্তাইনপন্থীদের মধ্যেকার ইস্ক্রার সমালোচকদের কথা বলা হয়েছে।
(*৯) পি, স্ত্রুভেঃ রূশী সংশোধনবাদী । উনি রূশী আইনি পত্রিকা "নভয়া স্লোভো" এবং "রূশকায়া মিসল"-র সম্পাদক হিসাবেও কাজ করেছেন। "সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক পার্টি" -র প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত RSDLP-র সংবিধান তারই লেখা বলে ধারণা।
ইস্ক্রা সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য নীচের লিংকে ক্লিক ক্রুনঃ
ইস্ক্রা ও লেনিন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন